আজ বৃহস্পতিবার, ১৪ই ফাল্গুন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২৭শে ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

কর্মসূচী পালনে ব্যর্থ বিএনপি এখন বিলীন হওয়ার পথে!

নিজস্ব প্রতিবেদক
পরপর তিনটি নির্বাচনে বিপর্যয়ের পর বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি আগের যেকোন সময়ের চেয়ে বেশ নাজুক অবস্থানে রয়েছে। সরকারি দলের মামলা হামলা বিএনপির নেতাকর্মীরা ঘুরে দাঁড়াতে পারছে না। তবে নতুন কর্মকৌশল ঠিক করা নিয়ে ঘুরপাক খাচ্ছে দলটি।

দল পরিচালনার পদ্ধতি নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে বিএনপিতে। এমত অবস্থায় তাদের আগামী দিনের করণীয় নিয়ে দ্বিধা-দ্বন্দের সৃষ্টি হয়েছে নেতাকর্মীদের মধ্যে। বিশেষ করে ঘুরে দাড়ানোর জন্য কী করতে হবে বা এই মূহুর্তে তাদের করণীয় কী এ বিষয়ে তাদের দৃশ্যমান কোন উদ্যোগ নেই বললেই চলে।

তার মধ্যে আবার দলীয় কর্মসূচী পালনে বিএনপির নেতাকর্মীদের মধ্যে অনীহা লক্ষ্য করা গেছে। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির ভরাডুবির পর বছরের প্রথম কর্মসূচীতে নারয়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির কয়েকজন নেতার দেখা মিললেও জেলা বিএনপির কোন পর্যায়ের নেতাকর্মীদের দেখা যায়রি রাজপথে। তাদের এসকল কর্মকান্ডের ফলে দলীয় কর্মসূচীর বিষয়ে অনীহার প্রমাণ মিলছে।

তাই অনেকেই মনে করছেন, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর বছরের প্রথম কর্মসূচী পালনে ব্যর্থ বিএনপির অস্তিত্ব দিন দিন বিলীনের হওয়ার পথে চলে যাচ্ছে।

বিশেষ করে, ঘুরে দাড়ানোর জন্য কিভাবে নতুন কর্মকৌশল তৈরী করা হবে তা নিয়ে দৃশ্যমান কোনও উদ্যোগ নেই বললেই চলে। বরং ঐক্যবদ্ধ থাকার বদলে দলটির উপরি কাঠামোগত কিছুটা সন্দেহ ও অবিশ্বাস তৈরী হয়েছে। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মনোনয়ন পাওয়া না পাওয়াকে কেন্দ্র করে নারায়ণগঞ্জ বিএনপির সিনিয়র নেতাকর্মীদের মধ্যে কোন্দল ছিলো দৃশ্যমান। সেই কোন্দল এখনোও শেষ হয়নি এমনটাও মনে করেন অনেকে। সেই নির্বাচনে বিশেষ করে নারায়ণগঞ্জ-১ (রুপগঞ্জ) আসনে জেলা বিএনপির সভাপতি কাজী মনিরুজ্জামানকে মনোনয়ন দেয়ায় সে আসন থেকে মনোনয়ন বঞ্চিত হন রাজপথে হামলা মামলার শিকার হওয়া এবং নারায়ণগঞ্জ বিএনপির অভিভাবক এড. তৈমুর আলম খন্দকার। যার ফলে নিজ দলের মধ্যে সেসময় তৈরী হয়েছিলো চরম কোন্দল।

এমন কি তৈমূর আলম খন্দকার মনোনয়ন বঞ্চিত হওয়ায় তৈমূর সমর্থকরা ঢাকার নয়া পল্টনে বিএনপির দলীয় কার্যালয় পর্যন্ত ভাংচুর করে। এছাড়াও নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনে প্রভাবশালী সংসদ সদস্য একেএম শামীম ওসমানের বিপক্ষে বিএনপি থেকে মনোনয়ন দেয়া হয়েছিলো অচেনা অজানা মুফতি মনির হোসাইন কাশেমীকে। যার ফলে সেসময় মনোনয়ন বঞ্চিত হন সাবেক সংসদ সদস্য গিয়াসউদ্দিন ও জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি শাহ আলম। আর ঠিক সে কারনেই বিক্ষোভে ফেটে পরেন গিয়াসউদ্দিন ও শাহআলম সমর্থকরা। তাদের যুক্তি ছিলো সিনিয়র সকল নেতাদের রেখে কেন অজানা কাশেমীকে মনোনয়ন দেয়া হয়েছিলো।

এছাড়াও নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনে মহানগর বিএনপির সভাপতি ও তিন বারের সাবেক সংসদ সদস্য এড. আবুল কালামকে মনোনয়ন না দিয়ে দেয়া হয়েছিলো এস. এম আকরামকে। এসকল ঘটনাকে কেন্দ্র করেই মূলত নারায়ণগঞ্জ জেলা ও মহানগর বিএনপির নেতাকর্মীদের মধ্যে বিভাজনের সৃষ্টি হয়েছিলো। আর ঠিক সেই বিভাজন এখনো কাটেনি। যার ফলে রাজপথে দলীয় কর্মসূচী পালনে একজনকে দেখা গেলে আরেকজনকে দেখা যায়না।
জানা যায়, প্রশাসনের ভয়ে রাজপথ থেকে ইমিমধ্যেই হারিয়ে গেছেন বিএনপির নেতাকর্মীরা।

আইনশৃঙ্খলা বাহীনির একের পর এক মামলায় বর্তমানে অনেকটাই ঘড় ছাড়া হয়ে পরেছেন বিএনপির নেতাকর্মীরা। নেতাকর্মীদের বেশীর ভাগ সময় থাকতে হয় আদালতমুখী। গ্রেফতারের ভয়ে শীর্ষ নেতাকর্মীদের থাকতে হয় কর্মসূচীর বাইরে। কর্মসূচী পালনকালে হাতে গনা কয়েকজন নেতাকর্মী ছাড়া কাউকেই দেখা যায়না রাজপথে। ফলে তাদের আন্দোলন সংগ্রাম তেমন জোরদার হয়না। বর্তমানে দলীয় কর্মসূচী পালনে নারায়ণগঞ্জ বিএনপির নেতাকর্মীদের মধ্যে অনীহা লক্ষ্য করা গেছে।

বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়াকে কারাগারে প্রেরণ করার পর থেকে তাদের পুরোপুরি রাজপথে থাকার কথা ছিলো। এমনকি তারা ঘোষণা পর্যন্ত দিয়েছিলো যে “জেলের তালা ভাঙবো খালেদা জিয়াকে আনবো”। সেকল ঘোষণ াএখনও পর্যন্ত তাদের মুখেমুখেই রয়ে গেছে। এরপর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির ভরাডুবির পর তারা অভিযোগ করেছিলো যে ভোটে বিপুল পরিমাণ কারচুপি সহ আগের রাতেই ব্যালট ভরে রাখা ছাড়াও অসংখ্যা আন্দোলন করেছিলো তারা। এবং রাজপথে থেকে সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন সংগ্রাম চালানোর কথা বলেছিলো তারা। তারই ধারাবহিকতায় একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বচনের পর বছরের প্রথম কর্মসূচী পালনেই ছিলো নারায়ণগঞ্জ বিএনপির অনীহা। কোন সিনিয়র নেতাকর্মী সে কর্মসূচীতে অংশগ্রহণ করেনি।

এমনকি বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা ও নারায়ণগঞ্জ বিএনপির অভিভাবক তৈমূর আলম খন্দকার, জেলা বিএনপির সভাপতি কাজী মনিরুজ্জামান, মহানগর বিএনপির সভাপতি আবুল কালাম, সাবেক সংসদ সদস্য গিয়াউদ্দিন, সাধারণ সম্পাদক মামুন মাহমুদ, নির্বাহী কমিটির সদস্য মোস্তাফিজুর রহমান দীপু ভূইয়া, জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি আতাউর রহমান আঙ্গুর, শাহ আলম, মহানগর বিএনপির সহ-সভাপতি এড. সাখাওয়াত হোসেন খান সহ সিনিয়র কোন নেতাকর্মীই ছিলো না কর্মসূচীতে। ঠিক তার সূত্র ধরেই সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন বছরের প্রথম কর্মসূচী পালনে ব্যর্থ বিএনপি বর্তমানে বিলীন হওয়ার পথে।